নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে জানুন ২০২৪

বর্তমানে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করা খুবই সহজ করা হয়েছে। ২০২৪ সালে এসে আপনাকে কখন সরকারি ভাবে ভোটার হালনাগাত হবে সেটির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তথা NID Card পেতে পারেন

আপনার বয়স ১৬ কিংবা তারচেয়ে বেশি হলেই অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন করতে না পারলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র অর্থাৎ এনআইডি কার্ড পেতে হলে কিছু শর্ত রয়েছে।

বাংলাদেশে নতুন ভোটার হওয়ার শর্ত

সংবিধান ও আইন অনুযায়ী একজনের ভোটার আইডি কার্ড থাকা মানে সে এদেশের নাগরিক ও দেশের সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবে। অন্য দেশের কেউ চাইলেই হুট করে বাংলাদেশের ভোটার (নাগরিক) হতে পারবে না। তাই ভোটার হওয়ার জন্য রয়েছে কিছুয় শর্তঃ

  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে (জন্ম সূত্রে অথবা অনুমোদন)
  • আবেদনকারীর বয়স ১৬ বছরের বেশি হতে হবে।
  • আগে কখনো ভোটার হয়নি এমন ব্যক্তি।

নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে ২০২৪

নতুন ভোতার হতে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট, পিতা মাতার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট প্রয়োজন। আপনার ঠিকানা যাচাই ও স্থায়ী বাসিন্দা প্রমানের জন্য বিদ্যুৎ অথবা গ্যাস বিলের কপি লাগবে। তাছাড়া জমির অথবা বাড়ির কর (খাজনা) পরিশোধের রশিদ প্রয়োজন হয়।

ভোটার নিবন্ধনের আবেদন অনলাইনে করেন কিংবা সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে করেন না কেন, সব ক্ষেত্রেই কিছু কমন ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় যার তালিকা নিচে দেয়া হলো-

  1. জন্ম নিবন্ধন সনদ ( অনলাইন করা / ডিজিটাল)
  2. স্কুল সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
  3. মা বাবার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি
  4. মোবাইল নাম্বার
  5. নাগরিক সনদ
  6. ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ/গ্যাস)
  7. ট্যাক্স / খাজনা আদায়ের রশিদ
  8. রক্তের গ্রুপিং রিপোর্ট (অপশনাল)
  9. অঙ্গীকারনামা (বয়স বেশি হলে)

আবেদন জমা দেয়ার সময় প্রাথমিক ভাবে উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র গুলো সংযুক্ত করতে হয়। তবে নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তা যাদি আপনার কাছে আরো কিছু ডকুমেন্টস চায় সেক্ষেত্রে তা যুক্ত করতে হবে। আপনি যদি আপনার আইডি কার্ডে আপনার রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করতে চান তা হলে অবশ্যই Blood Grouping Report জমা দিবেন।

অনেক মেয়ে স্বামীর বাড়িতে জাতীয় পরিচয়পত্র করে থাকে। তাদের আইডি কার্ডে পিতার নামের স্থলে স্বামীর নাম থাকে। তাদের আবেদনের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে কাবিন নামার কাগজ জমা দিতে হয়। তবে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হলো আইডি কার্ড যেখানেই করেন না কেনো NID Card এ স্বামীর নাম না ব্যবহার করে পিতার নাম ব্যবহার করবেন।

ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সসনদ

নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করতে হলে সর্বপ্রথম যে কাগজটি লাগবে তা হচ্ছে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ। ডিজিটাল জন্ম সনদ বলতে জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন থাকাকে বুঝায়। আপনার জন্ম নিবন্ধন অবশই বাংলা এবং ইংরেজি দুই ফর্মেটে থাকতে হবে। ইংরেজি করা না থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সিটি কর্পোরেশন থেকে করে নিতে হবে।

স্কুল সার্টিফিকেট

আপনি যদি পড়াশোনা করে থাকেন এবং বোর্ড পরিক্ষার সনদ থাকে তা হলে সেটি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেনে সংযোক্ত করতে পারেন। JSC, SSC, HSC অথবা সমমান পরিক্ষার সার্টিফিকেট থাকলে তা জমা দিতে হবে। এতে করে আপনার স্কুল সার্টিফিকেটের সাথে আইডি কার্ডের তথ্যের মিল থাকবে।

আর যদি লেখা পড়া না করে থাকেন তাহলে আপনাকে সার্টিফিকেট দিতে হবে না। এটি যাদের আছে তাদের জন্যই কেবল প্রযোজ্য। তবে আপনার পাসপোর্ট অথব ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে সেগুলো দিতে পারেন। তবে এসব অপশনাল ডকুমেন্টস দিলে ভালো না দিলেও কোনো সমস্যা নেই।

পিতা মাতার এনআইডি কার্ড

জন্ম নিবন্ধনের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র। আপনার আইডি কার্ডের আপনার বাবা মায়ের নাম এবং তাদের NID নাম্বার সারবারে উল্লেখ থাকবে তাই তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হয়।

খেয়াল রাখতে হবে যাতে আপনার সকল কাগজপত্রে সব তথ্য একই হয়। যেমন সার্টিফিকেটে আপনার নাম, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নাম যেমন থাকবে পাসপোর্ট কিংবা পিতা-মাতার আইডি কার্ডে তাদের নাম একই হতে হবে। তথ্যের মধ্যে গড়মিল থাকলে আইডি কার্ড করতে সমস্যা হবে।

সচল মোবাইল নাম্বার

আবেদনের সাথে একটি সচল মোবাইল উল্লেখ করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড, সংশোধন ও রি ইস্যু করার জন্য যখন NID Server লগইন করতে যাবেন তথন এই মোবাইল নাম্বারে OTP আসবে। তবে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করবেন তাদের প্রথমেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে যাচাই করতে হয়।

নাগরিক সনদ

শুধু বাংলাদেশি নাগরিক এদেশের ভোতার হতে পারবে এবং ভোটার আইডি করতে পারবে। তাই নতুন NID Card Application করার সময় আপনাকে অবশ্যই নাগরিক সনদ/চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট দিতে হবে। আপনি বাংলাদেশের একজন বৈধ নাগরিক সেটি প্রমান করার জন্য এই নাগরিক সনদ প্রয়োজন হয়ে থাকে।

গ্রাম এলাকা হলে চেয়ারম্যান অফিস অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আর পৌরসভা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস এবং সিটি কর্পোরেশন হলে মেয়রের অফিস থেকে আপনার নাগরিক সনদ নিতে পারবেন।

ইউটিলিটি বিলের কপি

এদেশের একজন স্থায়ী বাসিন্দা সেটি প্রমানের জন্য আপনার একটি ইউটিলিটি বিলের কপি প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে এমন একটি কপি অথাবা গ্যাস বিল প্রদান করেছেন এমন একটি বিলের কপি প্রয়োজন হবে।

বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসের বিলে আপনার নামই থাকতে হবে এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনার পিতা-মাতার নামে হলেও সমস্যা নেই। তবে বিলের কপিটি যাতে খুব বেশি পুরাতন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

খাজনা রশিদ

জমি অথাবা আপনাদের বসত বাড়ি খাজনা পরিশোধ করেছেন এমন একটি রশিদ প্রয়োজন হবে। যদি খাজনা রশিদ না থাকে তাহলে ইউনিয়ন অফিস থেকে প্রথমে খাজনা প্রদান করে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।

রক্তের গ্রুপিং রিপোর্ট

আমরা অনেক সময় খেয়াল করলে দেখতে পাই কারো কারো আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করা থাকে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে থাকেনা। এর কারণ হলো যখন ভোটার হবার আবেদন করে তখন কেউ কেউ রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে থেকে আবার অনেকে সেটি দেয় না।

রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দেয়া অপশনাল, তাই আপনি চাইলে এটি দিতে পারেন। দিলে আপনার আইডি কার্ডের পেছেনের পার্টে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ থাকবে আর না দিলে সেটি উল্লেখ থাকবেনা। তবে আমাদের পরামর্শ হলো রক্তের গ্রুপ টেস্ট করে সেটি জমা দিয়ে দিন, এতে করে আপনার আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ থেকবে।

আশা করছি একজন নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে যা যা ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় সে বিষয়ে স্পস্ট ধারনা দিতে পেরেছি। নির্বাচন কমিশন যদি পরবর্তী সময়ে আপডেট আনে তাহলে আমরা সময়ের সাথে সাথে আমরা এখানে আপডেট দিতে থাকবো।

নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা যাচাই বাছাই করার জন্য উল্লেখিত কাগজগুলোর বাহিরেও এডিশনাল ডকুমেন্টস চাইতে পারে। আপনার কাগজপত্রে সব তথ্য মিল থাকলে এগুলো দিয়েই হয়ে যাবে।

নতুন ভোটার আবেদন ফরম

সরাসরি নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোতার হওয়ার আবেদন করতে হলে ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ ডাউনলোড সেটি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে আফিসে জমা দিতে হয়। নিজে নিজে নিবন্ধন ফরম ২ ফিলাপ করে সাথে উল্লেখিত কাগজপত্র সংযুক্ত করে নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।

তবে অনলাইনে আবেদন করলে ফরম পূরণ করার প্রয়োজন নেই। অনলাইনে এই ফরম পূরণ হয়ে যায়। আপনাকে শুধু নির্ধারিত তারিখে কাগজপত্র নিয়ে অফিসে জমা দিতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *