অনলাইনে ভোটার আবেদন করুন | NID registration bd

আপনার বয়স ১৬ বছর হলেই অনলাইনে অথবা উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে ভোটার হতে অর্থাৎ ভোট দেয়ার জন্য নুন্যতম ১৮ বছর হতে হবে।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সেবা যেমন চাকরির আবেদন, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট করা, নতুন সিম ক্রয় করা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে অনেক ক্ষেত্রে NID Card এর প্রয়োজন।

যাদের ভোটার হওয়ার বয়স হয়েছে তারা এখানে দেখানো নিয়ম আনুসরণ করে অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। চলুন তাহলে পেরথমে জেনেনেই ভোটার হতে কি কি লাগে? এবং কিভাবে নতুন ভোটার আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়?

ভোটার হওয়ার যোগ্যতা

ভোটার হওয়ার জন্য আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। এর আগে ভোটার নিবন্ধন করে থাকলে দ্বিতীয় বার আবেদন করতে পারবেন না।

  1. বাংলাদেশের নাগরিক
  2. বয়স ১৬ অথবা এর বেশি
  3. আগে কখনো আইডি কার্ড করেনি

ভোটার নিবন্ধন করতে যা যা লাগে

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে নিজের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট, পিতা মাতার আইডি কার্ড, ইউটিলিটি বিলের কপি সহ আরো কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় যা নিচে তালিকা আকারে দেয়া হলো-

  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ (JSC, SSC, HSC অথবা সমমান)
  • নাগরিকত্ব সনদ।
  • মোবাইল নাম্বার।
  • রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট (অপশনাল)।
  • পিতা মাতার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ / গ্যাস / পানি অথবা বাসা ভাড়ার রশিদ)

অনেক মেয়ে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে ভোটার হয় তাদের ক্ষেত্রে স্বামীর আইডি কার্ড এবং কাবিননামা প্রয়োজন হবে। ভোটার হওয়ার পর সে তাকে তার স্বামীর বাড়ির ঠিকানায় ভোট দিতে হবে।

একজন নতুন আইডি কার্ড কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত পোস্ট করা আছে। যাদের বয়স বেশি হয়ে যায় তাদের পূর্বে ভোটার হয়নি এই মর্মে নতুন ভোটার অঙ্গীকারনামা লিখতে হয়।

অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন

অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে ভিজিট করুন ভোটার নিবন্ধন ওয়েবসাইটে। এখন আপনার নাম, জন্ম তারিখ এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে একাউন্ট নিবন্ধন করুন। তারপর ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা এবং পিতা মাতার তথ্য দিতে ফরমটি পূরণ করুন।

আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র / ডকুমেন্টস আপলোড করে আবেদন সাবমিট করুন। সাবমিট করা আবেদন ফরম ডাউনলোড করে এর সাথে ভোটার হতে যে সকল কাগজ প্রয়োজন তা সংযোজন করে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে জমা দিন।

আবেদন সাবমিট করার কিছু দিন পর আপনাকে আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা স্ক্যান এবং ছবি তোলার জন্য আপনার ফোনে ম্যাসেজ পাঠানো হবে। ম্যাসেজ পেলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে আসবেন।

ছবি তোলার কিছু দিন পর আপনার মবাইলে আরেকটি ম্যাসেজ আসবে যার মধ্যে আপনার আইডি কার্ড রেডি হয়েছে তা জানিয়ে দেয়া হয়।

ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া

যেকোনো কাজ ধাপে ধাপে করলে সহজ হয়। তাই ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ছোট ছোট ধাপে সাজানো হয়েছে।

NID Service ওয়েবসাইটে একাউন্ট নিবন্ধবন

ভোটার নিবন্ধন করতে নির্বাচন কমিশনের services.nidw.gov.bd পোর্টাল ভিজিট করুন। NID Application System এ নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন অপশন থেকে আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করুন।

তারপর ডকুমেন্টস অনুসারে নির্ভুল ভাবে আপনার ইংরেজিতে নাম এবং জন্ম তারিখ লিখুন। নিচে দেখানো নিরাপত্তা ক্যাপচা ফিলাপ করে বহাল বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন

আপনার ব্যবহৃত মোবাইলক নাম্বারটি সঠিকভাবে লিখে ভেরিফিকেশনের জন্য বার্তা পাঠানে ক্লিক করুন। আপনি চাইলে ০১ অথবা শুধু ১ থেকে আপনার নাম্বার লিখতে পারেন।

মোবাইল নাম্বার সঠিক হলে আপনার ফোনে ৬ সংখ্যার কোড যাবে। এখন যাচাইকর ঘরে OTP কোড দিয়ে বহাল বাটন চাপুন।

ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড

একাউন্টে প্রবেশ করার জন্য আমাদের ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। userName ইংরেজি অক্ষর এবং সংখার সমন্বয়ে তৈরি করবেন যাতে এটি ইউনিক হয়। Password নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন।

কারো ক্ষেত্রে যদি Username Already Exists দেখায় তাহলে ইউজারনেম কিছুটা পরিবর্তন করে ইউনিক করে দিন। ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সেট করা হয়ে গেলে সেটি কোথাও লিখে রাখুন। কারণ পরবর্তী সময়ে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করতে এটি প্রয়োজন হবে।

নতুন ভোটার আবেদন ফরম পূরণ

ভোটার আবেদন ফরমটি তিনটি অংশে বিভক্ত ১. ব্যক্তিগত তথ্য, ২. অন্যান্য তথ্য এবং ৩. ঠিকানা। এই তিনটি অংশই সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। এই ফরমে কোনো ভুল তথ্য দিলে জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল তথ্য আসবে।

ব্যক্তিগত তথ্য

ব্যক্তিগত তথ্য অংশে আপনার বাংলায় নাম, জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, জন্ম স্থান এবং পিতা মাতার তথ্য লিখতে হয়। এখানে আপনার ইংরেজি নাম এবং জন্ম তারিখ আগে থেকে ফিলাপ করা থাকবে যেটি পরিবর্তন করা যাবে না। তা একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার সময় নির্ভুল ভাবে নাম এবং জন্ম তারিখ লিখতে হলা হয়েছে।

এই ব্যক্তিগত তথ্যের অংশেই পিতা মাতার তথ্য প্রদান করতে হবে। পিতা মাতার আইডি কার্ড এবং আপনার স্কুল সার্টিফিকেট অনুসারে মা-বাবার নাম বাংলায় এবং ইংরেজিতে লিখুন। চাইলে তাদের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিতে পারেন তবে এটি অপশনাল।

একনজরে দেখে নিন ব্যক্তিগত তথ্য অংশে কি কি তথ্য দিয়ে ফরম ফিলাপ করতে হবে-

  • নিজের নাম
  • জন্ম তারিখ (আগে থেকেই পূরণ করা থাকবে)
  • জন্ম নিবন্ধন নাম্বার
  • লিঙ্গ
  • জন্মস্থান
  • রক্তের গ্রুপ
  • পিতা মাতার নাম (বাংলা এবং ইংরেজি)
  • পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার (ঐচ্ছিক)

তবে আপনার মাতা পিতা কেউ মৃত হলে সেটি নির্বাচন করার জন্য মৃত লিখিত ধরে টিক চিহ্ন দিয়ে মৃত্যু সাল লিখুন। এরপর আপনার অভিভাবকের তথ্য দিতে হবে। অভিভাবক হিসেবে বাবা কিংবা মায়ের তথ্য দেওয়া ভালো।

আপনার ক্ষেত্রে যদি আভিভাবক অন্য কেউ হয়ে থাকে তাহলে তার নাম এবং জন্ম তারিখ লিখুন। আপনি চাইলে আপনার বড় ভাই / বোনের তথ্য দিয়ে খালি ঘর গুলো ফিলাপ করে দিতে পারেন। এটি একটি অপশনাল বিষয় না থাকলে খালি রাখতে পারেন।

অন্যান্য তথ্য

এই অংশে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও ধর্ম বাছাই করুন। কেউ যদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অর্থাৎ প্রতিবন্ধি হয়ে থাকে তাহলে সেটি এখানে নির্বাচন করে দিতে হবে।

অন্যান্য তথ্যের অংশে আরো একটি ঐচ্ছিক বিষয় যুক্ত করা যায় সেটি হচ্ছে সনাক্তকরণ চিহ্ন। আপনার যদি কোন জন্ম দাগ কিংবা সনাক্তকারি চিহ্ন থাকে তাহলে সেটির বর্ণনা লিখতে পারবেন।

ঠিকানা লিখুন

ঠিকানা লিখার প্রথমে অবস্থানরত দেশ বাংলাদেশ সিলেক্ট করবো। কারণ আমরা বাংলাদেশ থেকেই ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করতেছি।

আইডি কার্ডের আবেদন ফরমে বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা দিতে হয়। বর্তমান ঠিকানার স্থানে আপনার বর্তমান এড্রেস এবং স্থায়ী ঠিকানার স্থানে পার্মানেন্ট এড্রেস লিখুন। অনেকের বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকান একই। এমন হলে উভয় স্থানে একই ঠিকানা লিখুন।

আপনি যে ঠিকানায় ভোটার হতে চান সে ঠিকানার উপরের দিকে থাকা “এই ঠিকানায় ভোটার” টিক চিহ্ন দিয়ে দিন।

আপনার বর্তমান ঠিকানা লেখার জন্য পর্যায়ক্রমে জেলা, উপজেলা, আর.এম.ও, ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা নির্বাচন করুন। তারপর মৌজা, ইউনিয়নের ওয়ার্ড নাম্বার, গ্রামের নাম, বাসার ঠিকানা দিন।

জেলা > উপজেলা > আর.এম.ও > সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন > মৌজা > ওয়ার্ড নাম্বার > গ্রাম > বাসা/হোল্ডিং > পোস্ট অফিস

ঠিক একই ভাবে স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রমে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, মৌজা, ওয়ার্ড নাম্বার, গ্রাম, বাসা, পোস্ট অফিস দিয়ে ঠিকানা লিখুন।

আপনি সঠিক ভাবে ঠিকানা দেয়ার পর আবেদন সাবমিট করুন। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে কোন ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয় না। আবেদন জমা দেয়ার সময় নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তা এসব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে থাকে।

ভোটার আবেদন চূড়ান্ত ভাবে সাবমিট করার আগে আবেদনের বিস্তারিত তথ্যসমূহ পুনরায় যাচাই করে নিন যাতে করে কোন ভুল না থাকে। আবেদনে ভুল থাকলে আইডি কার্ডে সে ভুল চলে আসবে আর পরে এটি নিয়ে ঝামেলায় পরতে হবে।

নতুন ভোটার আবেদন ফরম ডাউনলোড

সব কিছু চেক করা হয়ে গেলে আবেদন চূড়ান্ত ভাবে সাবমিট করুন। সাবমিট হয়ে গেলে এটি NID Server এ জমা হবে । তারপর হোম পেজ থেকে আপনার ভোটার আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন। এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন।

এই ডাউনলোড করা ভোটার নিবন্ধন ফরম এবং আইডি কার্ড করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র/ডকুমেন্টস নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিন।

ছবি তোলা ও বায়মেট্রিক তথ্য প্রদান

আবেদন জমা দেয়ার পর নির্বাচন কমিশন এটি যাচাই বাছাই করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য যেমন আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা স্ক্যান, ছবি ও স্বাক্ষর নেয়ার জন্য ডাকা হবে।

ছবি তোলার পর আবেদনটি কিছু দিন অনুমোদন হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। সাধারণত ৩০ দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই নতুন ভোটার আবেদন গুলো অনুমোদন পেয়ে যায়। এর পরেই আইডি কার্ড অনলাইনে চলে আসে। আপনার আইডি কার্ড হয়ে গেলে মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।

এনআইডি কার্ড ডাউনলোড

আপনার আইডি কার্ড অনলাইন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশইনের ১০৫ নাম্বার থেকে আপনার ফোনে SMS করে সেটি জানিয়ে দেয়া হবে। ম্যাসেজ আসার পর আপনি আপনার একাউন্টে প্রবেশ করে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।

ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে?

ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে আসার পর আইডি কার্ড অনলাইন হয়ে ৩০ দিন থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে। নির্বাচন চলাকালীন সময় এবং কাজের চাপের উপর সময়ের পার্থক্য হয়ে থাকে।

কাদের ভোটার অঙ্গীকারনামা প্রয়োজন?

যাদের বয়স তুলনামূলক বেশি অথবা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভোটার হয়নি তাদের জন্য পূর্বে আইডি কার্ডের নিবন্ধন করেনি এই স্বীকারোক্তি দিয়ে লিখিত অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *