ডাবল ভোটার হলে করনীয় | একাধিক ভোটার বাতিল করুন
একজন বাংলাদেশী নাগরিক শুধু মাত্র একবার ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়া অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনেক কঠিন। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হবে। ভোটারলিস্ট থেকেও নাম কাটা যাবে, এমনকি এরজন্য তাকে জেল খাটতে হতে পারে।
ভুল বসত অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ ডাবল ভোটার হলে কিংবা voter list এর মধ্যে দ্বৈত ভোটার দেখালে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
Table of Contents
ডাবল / দ্বৈত ভোটার
ডাবল ভোটার হচ্ছে একজন নাগরিকের একের অধিক National Identity বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা। আমরা অনেকেই দ্বৈত নাগরিক এবং দ্বৈত ভোটারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারিনা। দ্বৈত নাগরিক হলো একজন ব্যক্তির একাধিক রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা। আর ডাবল ভোটার মানে একাধিকবার ভোটার হওয়া।
আপনার যদি বাংলাদেশ এবং আমেরিকার দুই দেশেই নাগরিকত্ব থাকে তাহলে আপনাকে দ্বৈত নাগরিক বলা হবে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশ একাধিক জাতীয়তা অনুমোদন করে।
আর আপনার যদি বাংলাদেশের একাধিক NID Card থাকে তখন এটিকে DOUBLE VOTER বা দ্বৈত ভোটার বলা হবে। বাংলাদেশ এমনকি পৃথিবীর কোন দেশই একই ব্যক্তিকে একাধিক NID এলাউ করে না। একাধিকবার ভোটার হওয়া অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নির্বাচন কমিশন এসকল আইডি কার্ড গুলো “লক” করে দিচ্ছে এবং প্রয়োজন ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করার পর নির্বাচন অফিসে গিয়ে হাতের আগুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) এবং চোখের রেটিনা স্ক্যান করে আসতে হয়। আর যদি একাধিক ভোটার হতে যায় তখন আগের তথ্যের সাথে তথ্য মিলে যায়। এর জন্য আইডি কার্ড বন্ধ করে রাখা হয়।
ডাবল ভোটারের কারণ
ইচ্ছাকৃত অথবা ভুলবশত দুই ভাবেই একাধিক ভোটার হতে পারে। তবে মানুষের অজ্ঞতা বা অসাবধানতার এই সমস্যার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী। ইচ্ছাকৃত কারণ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ জন্ম নিবন্ধন অথবা আইডি কার্ডের সাথে ভোটার তথ্যের অমিল, অপরাধ করে গাঢাকা দিতে, আইডি কার্ড হারিয়ে গেলেও নতুন আরেকটি আইডি কার্ড করতে চায়।
একের অধিক আইডি কার্ড করার পেছনে যে সব কারণ রয়েছে-
- পরিচয় গোপন করতে
- আইডি কার্ডের তথ্যে ভুল
- বয়স কমাতে বা বাড়াতে
- NID Card হারিয়ে গেলে
তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করার দীর্ঘ সময় পরেও যদি আইডি কার্ড অনলাইনে কিংবা হাতে না আসে তখন অফিসে যোগাযোগ না করেই আরেকবার আবেদন করে ফেলে।
ডাবল ভোটার হলে করনীয়
ডাবল আইডি কার্ড হয়ে গেলে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে একটি আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রে আপনার একাধিকবার ভোটার হওয়ার কারণ উল্লেখ করে নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে। নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা আবেদনের যথার্থতা বিবেচনা করে ডকুমেন্টের ভিত্তিতে পুরাতন আইডি কার্ড রেখে অন্য গুলো বাতিল করে দিবে।

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম আনুসারে প্রথম ভোটার আইডি কার্ডটি রেখে বাকি গুলো বাতিল করে দেয়া হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেদনের সাথে পিতা মাতার আইডি কার্ডের কপি, জন্ম নিবন্ধন এবং নাগরিক সনদ জমা দিতে হয়। এই সকল পেপারের উপর ভিত্তি করে একটি আইডি চূড়ান্ত করা হবে এবং বাকি সব বাতিল করা হবে।
যারা একাধিকবার ভোটার হয়েছেন অথবা একটির বেশি NID Card রয়েছে তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন NID ডাটাবেজ থেকে খুঁজে খুঁজে তাদের ভোটার আইডি কার্ড বাতিলসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছে। আপনার যদি এমন সমস্যা থাকে তাহলে দ্রুত নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে একটি ভোটার বাতিল করুন।
দ্বৈত ভোটারদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন “ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়া অপরাধ। শাস্তি অনেক কঠিন। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হবে। ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা যাবে। পাশাপাশি জেল খাটতে হবে।”
— ১৫ জানুয়ারি ২০২২
যারা দ্বৈত ভোটার আছে তাদের মধ্য থেকে প্রায় সকলেরই ভোটার আইডি কার্ড বন্ধ করে দেয়া হয় এবং প্রতিনিয়ত এটি মনিটরিং করা হয়। তাই ভুলবশত যদি আপনি দ্বৈত ভোটার হয়ে থাকেন যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কাছে ভুল স্বীকারোক্তি সহ আবেদন পত্র জমা করে আপনার দ্বিতীয় ভোটারটি বাতিল করুন।

একটি আইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি নিজের পরিচয় গোপন করতে অথবা কোন অসৎ উদ্দেশ্যে একাধিক ভোটার হয়ে থাকে তাহলে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে এমনকি জেল জরিমানাও হতে পারে। তবে ভুল বসত হয়ে গেলে সেটির জন্য নিজে থেকে ভুল স্বীকার করে আবেদন করলে কোন শাস্তি হয় না, বরং আইডি কার্ড চালু করে দেয়া হয়।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, “কোন নাগরিক মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান অথবা তথ্য গোপন করিলে এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন”
তাই আমাদের উচিত সঠিক তথ্য দিয়ে আইডি নিবন্ধন করা। তার পরেও যাদের আইডি কার্ডে ভুল চলে আসে তারা অনলাইনে আবেদন করে ভোটার আইডি সংশোধন করে নিবো। কোন ভাবেই একাধিকবার আবেদন করা যাবে না।
অনলাইনে ডাবল ভোটার বাতিল করা যায়?
এনআইডি সম্পর্কিত সকল NID Services যেমন নতুন ভোটার আবেদন, আইডি কার্ড ডাউনলোড ও সংশোদনের আবেদন অনলাইনে করা গেলেও দ্বৈত ভোটার বাতিল করার জন্য সরাসরি নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে হয়।
ডাবল ভোটার সমস্যা কেন হয়?
সাধারণত নতুন National Id Card এর জন্য আবেদন করার পর কোন কারণে আইডি কার্ড না পেলে আবার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করে। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের পরিচয় অথবা তথ্য গোপন করে আরেকটি আইডি কার্ড করে।